আমি লোকটা প্রচুর অলস। তার আগে বলে নেই, আমি একজন প্রোগ্রামার। তবে প্রোগ্রামার বললেই সবার মনে হয়, সি, পাইথন, হাসকেল কিংবা এসেম্বলিতে কোড লিখে, আজিব একটা বস্তু, চোখে বিশাল সাইজ চশমা পরে, অসামাজিক, ইনট্রোভার্ট এবং ফ্যাশনেবলি চ্যালেঞ্জড এবং প্রচণ্ড অলস কাওকে। তবে আমি এরকম না, আমি হচ্ছি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামার। আমি জাভাতে কোড লিখি, এবং প্রত্যেকটা অবজেক্ট ইনট্যনসিয়েট করে করে ডট দিই। আমি আসলে ডট ছাড়া মোটামুটি অচল। সব কিছুর জন্য রেফারেন্স লাগে।
গল্পটা বলি, আমি ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন থেকে টাকা তুলতে গেছি। সোনালী ব্যাংক এ ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন এর সাইনবোর্ড দেখেছি, সুতরাং এখান থেকে তুলা যাবে। গেলাম, কিন্তু ওনাদের সিস্টেমে সমস্যা। অন্য ব্যাংক এ রেফার করলো। গেলাম ব্র্যাক ব্যাংক এ। গিয়ে প্রথম ডেস্কে এ জিজ্ঞাসা করতেই পাঠিয়ে দিল ৫ নাম্বার ডেস্কে। সেই ডেস্কে এক ভদ্রমহিলা (মহিলা বলা কি ঠিক হবে (???) ) বসে আছেন। তাকে গিয়ে বললাম আমি টাকা তুলতে চাই। ভদ্রমহিলা আমাকে একটা ফরম ধরিয়ে বললেন এইগুলা পূরণ করে দেন। কিন্তু ফরম এর এতোগুলা ঘর দেখে আমার মনে হলো, কি আশ্চর্য এতো গুলা জিনিস আমাকে পূরণ করতে হবে, যিনি আমাকে টাকা পাঠিয়েছেন, উনি তো আমাকে একটা কোড ছাড়া আর কিছু দেন নি। আমি চিন্তা করতে থাকলাম, আর উনি আমার ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের আইডি-কার্ড চাইলেন, আমি বললাম, আমার তো ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের আইডি কার্ড নেই, তখন তিনি আমার ভোটার আইডি কার্ড চাইলেন। আমি তাকে বললাম, আমার তো ভোটার আইডি কার্ড নেই। উনি চোখটা কপালে তুললেন। বললেন আপনার ভোটার আইডি কার্ড নেই, কি আশ্চর্য। আসলে নেই, কারণ আমি শুরুতেই বলেছি আমি অনেক অলস, আসলেও তাই। এই জন্য ভোটার আইডি কার্ড নাই। তখন উনি বললেন আর কোন আইডি? আমি আমার ইউনিভার্সিটির আইডি দিলাম। উনি সেটা নেড়ে চেড়ে বলেলেন, এইটার তো মেয়াদ শেষ। মেয়াদ তো শেষ হবেই, আমি পড়ি চতুর্থ বর্ষে আইডি কার্ড হচ্ছে দ্বিতীয় বর্ষের। পরেরটা ইস্যুই করি নাই। কতো কষ্ট, হলের অফিসে যাও, তারপর গিয়ে দেখতে হবে, হলের অফিসে যিনি কার্ড দেয়ার হর্তাকর্তা, তার সময় সুযোগ, নাই বা তুললাম । সুতরাং উনি বললেন, আইডি কার্ড ছাড়া তো হবে না। আমি কি করি? উনি আবার জিজ্ঞাস করলেন, ব্র্যাক ব্যাংক এ আমার কোন কোন একাউন্ট আছে কিনা, আমি বললাম না। অনেকক্ষণ পর মনে হলো হ্যাঁ আছে তো, আমার তো একটা ব্র্যাক ব্যাংক এ একটা একাউন্ট আছে, আমি না কেন করলাম। তারপর তাকে বললাম আমার তো একাউন্ট আছে, উনি আমাকে বললেন,একাউন্ট নাম্বার কত? আমি সুন্দর করে বললাম জানি না তো? উনি আবারও চোখ কপালে তুলে বললেন, আপনার একাউন্ট নাম্বার মনে নেই? তখন আমার মনে হলো, আমার তো একটা ভিসা কার্ড আছে, তাকে বললাম,তাকে আমার ভিসা কার্ড টা দিলাম। তখন উনি কষ্ট করে আমার কার্ডটা নিয়ে গিয়ে আমার একাউন্ট ইনফরমেশন এবং আইডি কার্ড প্রিন্ট করে নিয়ে আসলেন। আমি এর মধ্যে ফরমে আমার নাম এবং কোড টা লিখেছি। উনি এসে বললেন, বাকি গুলো কই? বাকি গুলো তো আমি জানি না। উনি চোখ আকাশে তুললেন যখন জানলেন, যে আমাকে টাকা পাঠিয়েছে তার নামটাও জানি না। উনি বেশ অবাক হয়েই বললেন, আপনাকে একজন টাকা পাঠিয়েছে আর আপনি তার নাম জানেন না। কিছুক্ষন হ্যাঙ হয়ে থেকে আমাকে প্রশ্ন করতেই থাকলেন। আমি বললাম জানি না। আমার আসলে মনে পরছিল না। সবচেয়ে বেশি অবাক হলেন যখন দেখলেন আমার বর্তমান ঠিকানার জায়গাটাও খালি। আমি এখন নীলক্ষেত এ থাকি, কিন্তু এইখানের ঠিকানা জানি না। জানার দরকার মনে হয় নাই। তারপর আর কি উনি শুধু কোডটা নিয়ে কম্পিউটার থেকে বাকি সব ইনফরমেশন নিয়ে নিজেই ফিলআপ করলেন। তারপর আমার সিগনেচারটা দেখিয়ে বললেন, এইটার মতো করে এখানে এখানে সাইন করেন। উনি হয়তো ভাবছে আমি নিজের সাইনটাও ভুলে বসে আছি। তবে এর মাঝে একটা চরম ইনসাল্টিং কথা বলেছেন, সেটা না হয় নাইবা বললাম।
যাহোক, আমি শেষ পর্যন্ত টাকাটা তুলতে পারলাম। ভদ্রমহিলাকে একটা থ্যাংকস। কিন্তু উনি আসলে অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড কনসেপ্ট জানেন না। জানলে আমাকে এতো প্রশ্ন করতেন না। শুধু মাত্র আমার কোড টা নিলেই সব কিছু জানতে পারতেন।
আমি যে অলস তা নিয়ে আরেকটু বলি, সেটা হলো যে ভদ্রলোক আমাকে টাকা পাঠিয়েছেন, উনি আমাকে দুই সপ্তাহ থেকে মেইল করেই যাচ্ছেন যেন আমি যেন গিয়ে টাকাটা তুলি। উনি টাকা পাঠানোর তিন সপ্তাহ পর আমি টাকা তুলে আনলাম।
শেষে বলি তুমি যদি অলস না হও, তুমি আসলে খাটি প্রোগ্রামার হতে পারবে না।