যারা জন্ম থেকেই স্বাধীন তাদের কাছে স্বাধীনতার গুরুত্ব খুব সহজ একটা ব্যাপার। সেটা খুব বেশি করে উপলব্ধি করার মতো অবস্থা মনে হয় স্বাধীনতা উত্তর অর্থাৎ আমাদের প্রজন্মের খুব বেশি হয় নি। কারণ পরিবেশ, সময়ের ব্যাপ্তিতে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারও হালকা হয়ে আসে যদি সেটা নিয়ে অনুশীলনের ঘাটতি থাকে। আমাদের অনুশীলনের যে ঘাটতি রয়ে গেছে সেটা বোধহয় কাউকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। সবাই বুঝতে পারে। আমরা যারা নিজেদের স্বাধীন এবং আধুনিক মানুষ মনে করি, তাদের অনুশীলন গুলো যে দায়িত্বপূর্ণ হবে সেটাই স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল। দেশ ব্যাপারটি উপলব্ধির ব্যাপার। আমরা যেমন প্রতিদিন নিয়মিত গোসল করে নিজেদের পরিষ্কার রাখি, এই পরিষ্কার রাখার প্রক্রিয়াটা কিন্তু একটা কাজ, সেটা নিজের জন্যে করি, আলস্য কিংবা অন্য কোন অজুহাত এসে বাধা দেয় না। ঠিক তেমনি দেশকে নিজের অংশ মনে করে নিলে মনে হয় অজুহাত দেওয়ার অংশগুলো কমে যাবে। দেশ আমাদের পরিচর্যা (Serve) করবে না, বরং আমরা দেশকে পরিচর্যা করবো, এমনটাই হওয়ার কথা। কিন্তু তারপরেও আমরা প্রতিনিয়ত নানা রকম অজুহাত বা যুক্তি তৈরি করে গালা গালি করি, এই দেশ আমাদের কি দিয়েছে বা দেয়নি তার হিসেব-নিকেষে বসে যাই, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে থাকি। হিসেবটা বোধহয় উল্টাটা হওয়াই উচিৎ ছিল।
আধুনিক মানুষের দায়িত্বগুলো বুঝে নেওয়াটাও ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে থাকে। দেশকে পরিচর্যা করা খুব কঠিন কাজ নয়, নিজের জায়গা থেকে নিজের কাজটুকু সঠিক ভাবে করে যাওয়টাই দেশের পরিচর্যা। দেশ মূলত একটি সু-সংগঠিত সিস্টেম। সেই সিস্টেমের উপাদান গুলো একটি আরেকটির উপর নির্ভর করে। একটি বিশৃঙ্খল হলেই তার প্রভাব অন্যগুলোর উপর পরে। এই জন্যে আমার মনে হয় প্রত্যেকটি মানুষের ফিলোসপিকাল দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত হওয়া খুব বেশি জরুরি। নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটা খুব ছোট ঘটনার ভাল মন্দ আলাদা করার পার্থক্য বুঝতে না পারলে সেটার প্রভাব বুঝতে পারাও কঠিন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়– একজন রিক্সাওয়ালা যেখানে ১০ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা ভাড়া নেয়, তারও প্রভাব অন্য যায়গায় পরে। একজন রিক্সাওয়ালর তার নিজের কাজের জন্যে গর্ব করার কথা ছিল কিন্তু অনেক সময় অন্যের দয়া কিংবা অনুগ্রহকে মিশিয়ে ফেলে কিংবা জোর করে অন্যকে বিপদে ফেলে। এটি একটা ছোট্ট সিস্টেম ইরর, যদিও আমরা সবসময় ইগনোর করে থাকি।
এই স্বাধীনতা দিবসে সবাইকে শুভেচ্ছা, সেই সাথে সবার ব্যক্তিত্ববোধ জেগে উঠবে, সবাই দায়িত্বশীল আধুনিক মানুষ হয়ে উঠবে সেই কামনা ব্যক্ত করছি।
এর সাথে স্বাধীনতা দিবস নিয়ে অনেক ছোট বেলার লেখা একটা কবিতাও দিয়ে দিলাম।
তিক্ত ২৫ মুক্ত ২৬
আরক্ত পৃথিবী, আতিক্ত মানব
তমিস্র হিংস্রতায় অবগাহন;
আজ স্মরণে ব্যাথার স্মৃতি সব।
সুখ ও কৃষ্ণতায় উত্থিত মন, মনন।
ক্লান্ত দেহ, অবসন্ন মন, নিশুতি আকাশ
সুখনিদ্রা, ক্রমশ গভীর হতে রাত্রি
হঠাৎ শব্দ, মাতিল উগ্র গন্ধে বাতাস,
সেদিন; তীব্র ভয়, বাঁচিবার আর্তি।
কঠিন আচরে বাংলার ভূমি, অগ্নিদাহ্য নক্ত,
হা হা কার। করুণ আকুতি, চক্ষুষ্মান রক্তবন্যা।
সজ্জিত হানাদার মাতাল মন করছে সিক্ত
তারপর; চারদিকে ঘোষিত রব, আন বাংলার স্বাধীনতা।