একটা সময় ছিল যখন আমি চাইলেই কবিতা লিখতে পারতাম। কবিতা নিয়ে ভাবতাম। পুরো মাথায় রাজ্যের কল্পনা ভর করে থাকতো। মনে মনে নানারকম গল্প তৈরি করতাম। সেই সময়টাকে খুব মিস করি এখন।
বড় হয়ে যাওয়ার মাঝে অসুবিধে ছাড়া সুবিধে খুব একটা দেখিনে আজকাল। বড় হয়ে যাওয়া মানেই কল্পনার সেই অলিক পৃথিবীকে ছুড়ে ফেলে বাস্তবকে বেশি করে উপলদ্ধি করা। রূপকথা থেকে ইতিহাস কিংবা চলমান ঘটনা প্রবাহ বেশি প্রায়োরিটি পায়। ইদানিং গল্পের বই পড়া হয় না। বই পড়লে ইতিহাস, প্রবন্ধ, দর্শনের বই বেশি পড়া হয়। টিভি দেখি না। দেখলে খবর ছাড়া আর কিছু দেখা হয় না।
বড় হওয়াটা বড় রকম অন্যায়। তবে সুবিধের মধ্যে একটা সুবিধা অবশ্য আমি দেখি- সেটি হলো নিজের ইচ্ছে মতো খাওয়ার সুবিধে। এই যেমন খেয়ে খেয়ে ফুটবল হয়ে যাচ্ছি।
এই সপ্তাহের ছুটির দিন দুটো শুধুই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলেম। এতো অলস সময় অনেকদিন কাটানো হয় নি।
ইংরেজীতে একটা শব্দ আছে, ’Leisure‘ যাকে আমরা বোধহয় ভুলতেই বসেছি। এই সময়টাতে সবাই কেমন করে জানি workaholic হতে বসেছি। আমি নিজেও কাজ করি। আনন্দ বা প্রমোদ যাই বলি না কেন সেটা খুবই সীমাবব্ধ রেখে কাজ করে যাওয়ার দলে আমি। নিজেকে প্রোডাক্টিভ রাখার চূড়ান্ত চেষ্টা আছে আমার। এই ব্যপারটিকে ইংরেজিতে হয়তো বলে productivity-fetishism. এর বাংলা কি হতে পারে চিন্তা করে পেলাম না। এই সময়টাকে নিজের জন্যে আলাদা করে একান্তে কিছু ভাববার সময় খুব একটা নেই। সময় গুলো শুধুমাত্র কাজের জন্যেই। আলাদা করে নিজের জন্যে সময় বের করে নিজের মতো ব্যায় করাটা যেন অনেকটা self-indulgent luxury. কিন্তু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে যে – গ্রেট আর্ট কিংবা ফিলোসফিক্যাল আইডিয়াস, নানা রকম ব্রেকথ্রু গুলো কিন্তু অবসরের ভাবনার ফসল।
Leisure কিন্তু breaks, time off, weekends, vacation এগুলোর সাথে যায় না। এটা অনেকটা আত্মার সাথে সম্পর্কিত। এর মানে কাজ থেকে পালানো নয় বা হঠাৎ করেও উধাও হয়েও যাওয়া নয়। বরাং নিজেকে নিজের মতো করে চলতে দেওয়া খানিকটা। অনেকটা হঠাৎ করে ঘুম চলে এলে নিজেকে ঘুম থেকে বিরত না রেখে ঘুমিয়ে পরা। নিজের মতো করে খানিকটা সময় নিরব থাকা। প্রতিদিনের কাজের জগৎ থেকে আলাদা হয়ে নিজের ভাবনার জগতে হারিয়ে যাওয়া হতে পারে। যা ইচ্ছে করে করা যেতে পারে। মনের মাঝে প্রশান্তি, এক ধরণের সুখ সুখ অনভূতি নিয়ে, সমস্ত কোলাহল থেকে আলাদা হয়ে, নীরব- নিস্তব্ধ ভাবে থাকাটাকে Leisure বলা যেতে পারে। এতে করে মানুষ তার নিজের নিজস্বতাকে ফিরে পায়। আরোপিত সকল কাজ, বাধা বিপত্তি থেকে নিজেকে দূরে রেখে একাকি নিজের ভাবনার সমুদ্রে ডুবে যেতে পারে, নতুন নতুন ভাবনা তৈরি করতে পারে।
এই সময়টা প্রত্যেকেরই প্রয়োজন।
যতোই বড় হচ্ছি আর নিজের মতো করে নিজের সময়টুকু বের করার ফুসরৎ আরও কমে যাচ্ছে।
অবসর নিয়ে ভাববার মতো অবসর কোথায় ?