আমি যে অনেক বেশি খাওয়াদাওয়া(যতটুকু না হলেই না) করি না সেই কথা কেও বিশ্বাস করতে চায় না। করবেই বা কেন, ঘটনা এমন হয়ে দাড়িয়েছে যে কিছুদিন পর আমার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সমান হয়ে যাবে। দিন দিন মোটা হচ্ছি- হচ্ছি তো হচ্ছিই। কেন হচ্ছি তার কারণ অবশ্য অবর্তমান।
স্বাক্ষর একদিন বলছিল, ’ওই মিয়া এতো খাও কেন?’
তো আমি বেশ কিছুদিন থেকে আমি কতটুকু খাচ্ছি তা তাকে দেখাচ্ছি। স্বাক্ষর আর আমি একই অফিসে চাকরি করি। সে সুবাধে খাওয়া দাওয়া একসাথে করা হয়। আমি খাওয়ার আগে স্বাক্ষরকে দেখাই কতটুকু খাচ্ছি।
সে আজ বলছে “তোমার ঘটনা ফার্মি প্যারাডক্স এর মতো।”
ফার্মি প্যারাডক্স বুঝতে হলে সবার আগে আমাদের রাতের বেলায় আকাশে তাকাতে হবে। তারপর অসংখ্য তারার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। তাকিয়ে থেকে থেকে এইসব মহাজাগতিক সৃষ্টি নিয়ে ভাবতে হবে।
এ মহাবিশ্বের আকার এতো এতো বড় যে আমাদের কল্পনার জগৎকে এতো সহজে অতিক্রম করে যে নিজেকে তখন অনেক ছোট এবং অসহায় মনে হয়। পরিষ্কার রাতের আকাশে আমরা খালি চোখে খুব বেশি হলে ২৫০০ তারা দেখতে পারি যেগুলোর প্রায় সব গুলোই অন্তত্যপক্ষে ১০০০ আলোকবর্ষ দূরে। কিন্তু আমরা যখনি এইসব তারা আর ছায়াপথ নিয়ে চিন্তা করি তখনি আমাদের মাথায় সেই সবচেয়ে কঠিন কিন্তু পুরোনো প্রশ্নটি আসে – আরো কোন বুদ্ধিমান প্রাণি আছে এই মহাবিশ্বে ?
আমাদের এই ছায়াপথে যতগুলো তারা আছে( ১০০-৪০০ বিলিয়ন), মোটামুটিভাবে ততসংখ্যক ছায়াপথ আমাদের এই অবজার্বেবল ইউনিভার্সে আছে। সব মিলে সংখ্যাটা দাড়ায়- 10^22 থেকে 10^24 ।
তার মানে দাড়ায় পৃথীবিতে যতগুলো বিচ আছে এবং সেগুলোতে যতগুলো বালি আছে, তাদের প্রত্যেকটির জন্যে ১০,০০০ তারা আছে।
তবে সবাই অবশ্য আমাদের সূর্য্যের মতো তারকার সংখ্যা নিয়ে একমত হন না। মতামত ৫% থেকে ২০% এর দিকে থাকে সাধারণত। এই মতামতকে সম্মান করেও বলা যেতে পারে ৫০০ বিলিয়ন বিলিয়ন সূর্যের মত তারকা আছে। তো এগুলোর ১% এর মধ্যে যদি পৃথিবীর মতো একটি করে গ্রহ থাকে, তাহলে তার সংখ্যা ১০০ বিলিয়ন বিলিয়ন। ধরে নেই এক বিলিয়ন বছর লাগে একটি প্রথিবীর মতো গ্রহে প্রাণ তৈরি হতে। ধরে নেই, এর ১% গ্রহে প্রাণ মানুষের মতো উন্নত প্রাণিতে পরিণত হয়। তাহলেও আমরা বলতে পারি, এই অবজারভেবল ইডনিভার্সে অন্তত্যপক্ষে ১০ মিলিয়ন বিলিয়ন ইন্টেলিজেন্ট সিভিলাইজেশান আছে।
কিন্তু যদিও অন্যান্য ছায়াপথে (গ্যালাক্সি) তে ইন্টেলিজেন্ট সিভিলাইজেশান থাকে, কিন্তু সেগুলো সম্পর্কে জানার কোন উপায় নেই, এর কারণ হচ্ছে আমাদের এই ইউনিভার্স সবসময় সম্প্রসারিত হচ্ছে। যদিও আমাদের অনেক দ্রুত স্পেসশিপ থাকে, সেগুলো অন্য গ্যালাক্সিতে পৌছতে বিলিয়ন বছর লেগে যাবে।
Let’s forget about other universe.
অবজারভেবল ইডনিভার্স থেকে শুধুমাত্র আমাদের এই ছায়াপথ মানে এই মিল্কিওয়ের কথা যদি চিন্তা করি, তাহলেও ১ বিলিয়ন পৃথিবীর মতো গ্রহে অন্তত্যপক্ষে ১০০,০০০ ইন্টেলিজেন্ট সিভিলাইজেশান আছে।
যদি তাই হয়, এখন পর্যন্ত আমরা কোন সিগনাল পাইনি এইসব ইন্টেলিজেন্ট সিভিলাইজেশান পক্ষ থেকে। তাইলে কই এরা ? রবীন্দ্রনাথের মতো বলবো –
“আজ এই জোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে বসন্তের এই মাতাল সমীরণে।।”
কিন্তু সেটা কেও বলছে না। তাহলে ঘটনা কি?
ঘটনাটা হচ্ছে, প্রবাবিলিটি বলছে ইন্টিলেজেন্ট সিভিলাইজেশন থাকার কথা। মানুষ এর এতোগুলো ইন্টেলিজেন্ট সিভালাইজেশন এর একটা ফ্রাকশন ও যদি অন্ত্যত্যপক্ষে রেডিও সিগনাল বা লেজার বিম বা অন্য কোন উপায়ে সিগনাল পাঠাতে পারে তাহলে তা আমরা ধরতে পারবো, কিংবা আমাদের সিগনাল তারা ধরতে পারবে। কিন্তু সেই ঘটনা এখনো ঘটেনি।
এই ঘটনা হচ্ছে ফার্মি প্যারাডক্স।
এতো প্যাচাল পারার পর আসল ঘটনা বলি। সেটা হচ্ছে দুটি প্রবাবিলিটিক ঘটনা বলছে তাদের মধ্যে যোগাযোগ হওয়া উচিৎ কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না।
আমি অনেক বেশি খাইনা, সুতরাং আমার মোটা হওয়ার পশ্নই উঠে না। কিন্তু রিয়িলিটি হচ্ছে আমি দিন দিন ফুটবলের মতো মোটাই হয়ে যাচ্ছি।
যেহেতু ফার্মি প্যারাডক্স এর কারণ কেও এখনো উদ্ধার করতে পারে নি, আমিও জানি না কেন মোটা হচ্ছি।