Whatever you undertake, act with prudence and consider the consequences
Kevlin Henney এর একট বই আছে, নাম 97 Things Every Programmer Should Know.
এই বইয়ের প্রথম চ্যাপ্টারের নাম – Act with prudence. তারপরেই উপরের লাইনটা আছে।
Prudence শব্দের অর্থ দূরদর্শিতা বা বিচক্ষণতা।
লাইনটার মানে দাড়ায় – বিচক্ষণতা সহিত কাজ কর।
এবার মূল আলোচনায় চলে আসি। আলোচনার বিষয়বস্তু টেকনিক্যাল ডেব্ট(technical debt)
এই জিনিস খায় না মাথায় দেয় তাই বলছি-
লোন নেওয়ার স্বল্পকালিন কিছু সুবিধা আছে। আমার হয়তো কিছু টাকার দরকার পড়েছে, আমি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে সাময়িক প্রয়োজনটা মেটাতে পারি। যেকোনো লোনের দীর্ঘ মেয়াদী ফলাফল মোটেও ভালো নয় এই জিনিস সবাই জানে। যতই দিন যাবে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বাড়তে থাকবে এবং কোনো একসময় আমি যে পরিমান লোন নিয়েছিলাম তার থেকে কয়েকগুণ (ক্ষেত্রবিশেষে ৪/৫ গুণ) বেশি টাকা পরিশোধ করতে হয়।
তবে এই লোন যত তাড়াতাড়ি শোধ করা যায় ততই মঙ্গলজনক (এতে সুদের পরিমান কম থাকে)। মূল বিষয়টা হচ্ছে লোন নেওয়া সাময়িক সুবিধার মনে হলেও এটি মোটেও ভালো কোনো বিষয় নয়।
টেকনিক্যাল ডেব্ট মূলত রুপক অর্থে ব্যবহৃত(metaphorical term) শব্দ। যেকোনো কাজের কিছু নিয়ম কানুন(discipline) থাকে। ধরুণ আপনি একটি ব্রিজ তৈরি করতে চান। কোনোরকম শৃঙ্খলা ছাড়া একটি ব্রিজ ইচ্ছমতো বানানো সম্ভব নয়। সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা পুরো প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা তৈরি করে, এই পরিকল্পনাতে প্রচুর হিসেব নিকেশ থাকে, কীভাবে কোন রিসোর্স কোথায় ব্যবহার করা হবে তা নির্দিষ্ট করা হয়।
এখন মনে করুণ, আপনি একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। আপনার এলাকার একজন মন্ত্রী এসে বললো, এই এলাকার উন্নয়নের জন্যে এই নদীতে একটা ব্রিজ তৈরি করে দিতে চাই। ব্রিজটি খুব দ্রুত বানাতে হবে। ১ সপ্তাহের মধ্যেই বানাতে হবে কারণ আমি জনগণের কাছে ওয়াদা দিয়েছি। এখন আপনি নিশ্চয় খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে ১ সপ্তাহে তাকে ব্রিজ বানিয়ে দেবেন না। কারণ আপনি ভালোভাবেই জানেন যে, এটি সম্ভব নয়। ব্রিজ তৈরি করার জন্যে প্রথমে জায়গা নির্বাচন করতে হবে। যেখানে ব্রিজ তৈরি করা হবে সেখানের মাটি পরীক্ষা করতে হবে। আরও নানারকম পরিকল্পনা করে তারপর কাজে নেমে যেতে হবে। এবং এই কাজের কোথাও ফাঁকি দেওয়া যাবে না। কারণ কোনোরকম হিসাবের গোলমাল হলে ব্রিজ ভেঙ্গে যেতে পারে ইত্যাদি (আমি সিভিল ইঞ্জিয়ার নয়, সুতরাং সব ডিটেইল জানি না)।
একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়েরও এমন একটি ডিসিপ্লিন রয়েছে। হুটহাট যা ইচ্ছেমতো এই কাজ করা যায় না। একজন ইঞ্জিনিয়ারের অনেকগুলো ডিজাইন ডিসিপ্লিন শিখতে হয়। নানা করম ডেটাস্ট্রাকচার, এলগরিদম এবং ডিজাইন প্যাটার্ন শিখতে হয়। এইগুলোর ভাল মন্দ আছে। অর্থাৎ একটি প্রক্রিয়া খুব ভালোভাবে করা যায় আবার একটু কম ভালোভাবেও করা যায়। ধরুন, আপনাকে একটা ১০ এর নামতা লেখার জন্যে একটি প্রোগ্রাম লিখতে বলা হলো। আপনি ১০ বার প্রিন্ট মেথড লিখে লিখে দিতে পারেন আবার একটা লুপের মধ্যে একটা প্রিন্ট মেথড ব্যবহার করেও লিখতে পারেন। প্রথম প্রক্রিয়াটি যদিও ১০ এর নামতা প্রিন্ট করবে কিন্তু সেটি আসলে মোটেও ভাল ডিজাইন নয়। এটি সাময়িকভাবে কাজ করলেও পরবর্তীতে ভেঙ্গে পরবে।
আপনি যখন কোনো প্রোগ্রাম লিখেন বা সফটওয়্যার তৈরি করেন, তখন আপনার সবসময় ভালো ডিজাইনগুলো পছন্দ করার উপায় থাকে। এই সিন্ধান্তটি আপনি ডেভেলপার/প্রোগ্রামার হিসেবে নিবেন। তবে এই পছ্ন্দ যে সবসময় করা যায় তা নয়। কখনো কখনো কাস্টোমারকে খুশি করতে খু্ব দ্রুত একটা আউটপুট তৈরি করতে একটা বাঝে সিন্ধান্ত নিতে হয়। এই বাজে সিন্ধান্তের পেছনে একটি ভালো সিন্ধান্ত ছিল যা আপনি নেননি। একে টেকনিক্যাল ডেবট বলা হয়।
এটি অনেকটা ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার মতো। সাময়িকভাবে সুবিধা দিলেও আপানাকে এর সুদ দিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি পুরোপুরি মিটিয়ে না দেন।
অনেকসময় একজন ডেভেলপার/প্রোগ্রামারকে এমন সিন্ধান্তের মুখোমুখি হতে হয় –
- doing it right.
- doing it quick
কখনো কখনো আপানকে দ্বিতীয় সিন্ধান্তটি নিতে হয়। আপনি ধরে রাখেন যে, পরবর্তীতে এসে এটিকে আপনি ঠিক করবেন। কিন্তু বাস্তবতা আসলে এমনটা কখনো হয় না। আপনার কাছে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যা আসতেই থাকবে। আপনি পরে করবেন বলে যে কাজটি রেখে চলে গেলেন তা হয়তো কখনোই করা হয়ে উঠবে না। আর এদিকে আপনার ঋণ বেড়েই চলবে। এভাবে ঋণ বাড়তে বাড়ে কোনো সময় আপনরা পুরো প্রজেক্ট মুখ থুবড়ে পরতেই পার। এটি খুবই স্বাভাবিক।
সুতরাং এই আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে, টেকনিক্যাল ডেব্ট যত কম রাখা যায় ততই ভালো। যদি কোনো কারণে আপনাকে দ্বিতীয় সিন্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে আপনাকে দ্রুত সেই ঋণ শোধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। পরবর্তী কাজের আগেই করে ফেলুন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি কোন ঋণ না থাকে।
কিন্তু আমরা জানি যে, বাস্তবে এমনটা সবসময় সম্ভব নয়। তাই সিন্ধান্ত নেওয়ার সময় চিন্তাভাবনা করে বিচক্ষণতার সাথে নেওয়া উচিৎ এবং এর পরিণতি (consequences) সম্পর্কে অবগত থাকা উচিৎ।
কাজী নজরুল ইসলামের একটা কবিতার লাইন –
“দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ”
দেনা না বাড়ানোই উত্তম।